বিআরটি গাজীপুর - বিমানবন্দর

বিআরটি গাজীপুর - বিমানবন্দর

বিআরটি গাজীপুর - বিমানবন্দর

   

 

বিআরটি প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বিবরণ

 

ঢাকা পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর একটি। বর্তমানে এ শহরে প্রায় এক কোটি সত্তর লক্ষ লোকের বসবাস। ধারণা করা হচ্ছে ২০২৫ সাল নাগাদ এ জনসংখ্যা দুই কোটি পঞ্চাশ লক্ষে গিয়ে দাঁড়াবে।দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ হার শহরবাসীর জন্য একটি সুলভ ও নিরাপদ গণপরিবহন ব্যবস্থার চাহিদাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। এ সমস্যা নিরসনে যানবাহন ব্যবস্থাপনায় শৃংখলা আনতে সরকার ইতিমধ্যেই নানান রকম উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তন্মধ্যে রিভাইজড স্ট্র্যাট্যাজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান ২০১৬ অনুযায়ী, ঢাকা শহরের গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে ২০৩৫ সাল নাগাদ ২টি বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট লাইন এবং ৫টি মাস র‍্যাপিড ট্রানজিট লাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত এবং তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ফরাসী উন্নয়ন সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে বর্তমানে বিআরটি লাইন ৩ এর উত্তর অংশের গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। একই সাথে বিআরটি লাইন ৩ এর দক্ষিণ অংশের এয়ারপোর্ট থেকে মহাখালী পর্যন্ত ডিটেইল্ড ডিজাইন সম্পন্ন করা হয়েছে এবং বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।নির্মাণাধীন (গাজীপুর - এয়ারপোর্ট) বিআরটি লাইন ৩ এর উত্তর অংশের দৈর্ঘ্য হবে ২০.৫ কিলোমিটার। এয়ারপোর্ট থেকে শিববাড়ি গাজীপুর টার্মিনাল পর্যন্ত এ লাইনে ২৫টি বিআরটি স্টেশন থাকবে এবং এ লাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় চার লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করবে।

সুষ্ঠূ ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত করিডোরের ৬টি ইন্টারসেকশনে গ্রেড সেপারেশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং এজন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়নে ৬টি ফ্লাইওভার নির্মাণাধীন রয়েছে। এয়ারপোর্ট ইন্টারসেকশনে উত্তর ও দক্ষিণগামী যানবাহনের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে রাস্তার উভয় পাশে ২টি পৃথক ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। এখানে বিআরটি স্টেশনটি ২টি ফ্লাইওভারের মধ্যবর্তী স্থানে নির্মিত হবে এবং বিআরটি বাসসমূহের জন্যে ইউ-টার্ণের ব্যবস্থা থাকবে।

পথচারীদের রাস্তা পারাপার নিরাপদ এবং নির্বিঘ্ন করতে এ প্রকল্পের আওতায় হাজী ক্যাম্প থেকে বিমানবন্দর টার্মিনাল পর্যন্ত ৬২০ মিটার দীর্ঘ একটি প্রশস্ত পথচারী-পারাপার আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে এবং বিআরটি ও এমআরটি লাইন- ১ এর স্টেশনসহ মোট ৭ টি প্রবেশপথ থাকবে। গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত বিস্তৃত করিডোরে উভয়মুখী বিআরটি বাস চলাচলের জন্য রাস্তার মাঝখানের অংশে ২টি ডেডিকেটেড বিআরটি লেন থাকবে। এই প্রকল্পে বিআরটি করিডোর নির্মাণের সাথে সাথে উভয় পাশের সাধারণ রাস্তার লেন, ধীরগতি যানবাহন চলাচলের পৃথক লেন ও পথচারী চলাচলের ফুটপাথের উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ কাজও চলমান রয়েছে।

৬ লেনের জসিমউদ্দিন ফ্লাইওভার নির্মাণাধীন রয়েছে, যার মধ্যের ২টি বিআরটি এর জন্য নির্ধারিত। এর ফলে উক্ত মোড়ের ট্রাফিক জ্যাম ও সিগন্যাল এড়ানোর ব্যবস্থা থাকবে এবং জসিমউদ্দিন ফ্লাইওভারের নীচ দিয়ে ইউ-টার্ন নেয়ার ব্যবস্থা থাকবে। অন্যান্য স্টেশনের মতো আজমপুর বিআরটি স্টেশনেও প্রবেশ করতে ও বের হতে ফুটওভার ব্রীজ, স্বয়ংক্রিয় চলমান সিঁড়ি, লিফট ও সাধারণ সিঁড়ির ব্যবস্থা থাকবে। হাউজবিল্ডিং থেকে চেরাগ আলী পর্যন্ত ৪.৫ কিলোমিটার অংশটি হবে এলিভেটেড যেখানে (১+১) = ২টি বিআরটি লেন ও ৪টি সাধারণ লেন থাকবে। এই অংশটি বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের আওতায় নির্মাণাধীন রয়েছে ।

উত্তরার সামগ্রিক পরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে দিয়াবাড়ি থেকে হাউজবিল্ডিং পর্যন্ত রাস্তার অংশে বিআরটি ফিডার সার্ভিসের মাধ্যমে বিআরটি মেট্রোরেলের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।আবদুল্লাহপুর ইন্টারসেকশনের বিভিন্নমুখী যানবাহন চলাচল সহজ ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে এলিভেটেড অংশের সঙ্গে আশুলিয়া বাইপাসসহ আরো ৪টি র‍্যাম্প সংযুক্ত থাকবে। এখানের বিআরটি স্টেশনটি এলিভেটেড অংশে নির্মিত হবে।তুরাগ নদীর ওপর বিদ্যমান ৪-লেনবিশিষ্ট টঙ্গী ব্রীজের স্থলে উভয়পাশে পথচারী চলাচলের ফুটপাথের ব্যবস্থাসহ ১০-লেনবিশিষ্ট ব্রীজ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।

মিক্সড ট্রাফিক লেনের যানবাহনের ইউ-টার্ণ সুবিধা প্রদানের জন্য গাজীপুরা ও সাইনবোর্ডে ২টি ইউ-টার্ণ ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে। ঢাকা বাইপাস রোডের যানবাহনের নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন গতিশীলতার জন্য ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডে ২ টি বিআরটি লেনসহ ৬ লেনবিশিষ্ট ভোগরা ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ময়মনসিংহমুখী যানবাহনসহ জয়দেবপুর চৌরাস্তায় যানচলাচল মসৃণ ও নির্বিঘ্ন করার জন্য এখানে একটি ২ লেভেলের ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে। বিআরটি স্টেশনটি ফ্লাইওভার এর উপরে নির্মিত হবে। ফলশ্রুতিতে মিক্সড ট্র্যাফিক লেনের বিভিন্নমুখী যানবাহন ফ্লাইওভার এর নিচ দিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে।

যাত্রীদেরকে বিআরটি বাস ব্যবহারের জন্য বাসে আরোহণ করার পূর্বেই টিকেট কাউন্টার বা ভেন্ডিং মেশিন হতে টিকিট ক্রয় করতে হবে অথবা অনলাইন থেকে র‍্যাপিড পাস আগেই কিনে রাখতে হবে। স্টেশনে যাত্রীদের জন্যে তথ্য প্রদর্শন ডিসপ্লে, স্বয়ংক্রিয় তথ্য ঘোষণার ব্যবস্থা, সিসিটিভি ক্যামেরা, যাত্রীদের পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থা এবং টয়লেট সুবিধা থাকবে। প্লাটফর্মে যাত্রীদেরকে বাসে উঠবার সময় নিরাপত্তা দিতে স্টেশনগুলিতে অটোম্যাটিক দরজার ব্যবস্থা থাকবে। এয়ারপোর্ট এবং গাজীপুরে নির্মাণাধীন উভয় বিআরটি টার্মিনালেই পর্যাপ্ত পার্কিং সুবিধা, রেস্ট রুম এবং অফিস রুমের ব্যবস্থা থাকবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়নে গাজীপুরে বিআরটি বাস ডিপো নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। এ ডিপোতে বিআরটি বাসগুলোর জন্যে পর্যাপ্ত পার্কিং, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং জ্বালানী সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে। এ ডিপোতে স্থাপিত কন্ট্রোলরুমের মাধ্যমে ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম ব্যবহার করে বাস পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি সকল কার্যক্রম তদারকী এবং পরীবিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

বিআরটি সিস্টেম চালু করার মাধ্যমে উত্তরা ও গাজীপুর শহর এলাকায় এবং এ করিডোরের উভয় পাশের আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট এক নতুন মাত্রা যোগ করবে। । বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের মাধ্যমে করিডোরটি নগরে বসবাসকারী ও অভ্যাগতদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে এবং নগরবাসীদের জন্য একটি নতুন পরিবহন সংস্কৃতি এবং যাতায়াতে-যোগাযোগে এক সার্বিক সমাধানের নতুন দুয়ার খুলে দেবে।

বিআরটি গাজীপুর - বিমানবন্দর